লেখাটা শিরোনামের মতোই, অর্থাৎ, বিয়ের বাজেট না বাজেট বিয়ে। বাজেট এয়ারলাইন্স, বাজেট ট্রিপের মত। সাধ্যসীমার ভেতরে, সাশ্রয়ী বিয়ে।

এখন , আপনার বিয়ে নিয়ে আপনার পরিবারের, আপনার নিজের কত অযুত নিযুত স্বপ্ন আছে, সেই স্বপ্নের কাঁচবাক্সে আমি মোটেই ঢিল ছুড়তে চাইছিনা। কিংবা কোনো একজন আপনাকেই শুধু বলছিনা , যেহেতু আপনার সাধ্য কিছুটা কম।
মনে পড়ে, ছোট বেলায় প্যারাগ্রাফ অনুবাদ? "গনি মিয়া একজন গরীব কৃ"?

ঋণ করে সন্তানের বিয়ের ব্যয়ভার ঘুচিয়ে অতঃপর ঋণের বোঝায় বাকী জীবন নরকযন্ত্রণাময় , সেই গনি মিয়া ! গল্পের শেষ লাইনটা ছিল" এখন তাঁর দুঃখের সীমা নাই" !

কেন একটা আনন্দোসব ব্যায়ভারের বোঝা, সীমাহীন দুঃখ কিংবা অসন্মানের চাপ বয়ে আনবে?

যারাই এখন বিয়ে রবেন, নিজেই বিয়ের সম্পূর্ন বা অধিকাংশ ব্যয়ভার বহন করবেন , এতোটা প্রস্তু বেশীর ভাগই হতে পারেন নি বা অনেকে এতো দায় নেনও না। ব্যয়ভার গিয়ে পরে বাবা মা রূপী গনি মিয়ার উপর। হোক সেই বাবা মা সবচ্ছল। তবু তারা সন্তানের প্রত্যাশার দিকে চেয়ে, তাঁর চেয়েও বেশী লৌকিকতার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে, অনেকে নিজের বা সন্তানের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারনে সাধ্যের অসাধ্য অনেক কিছুই করতে চান।

কিন্তু, আদৌ কি সেটা জরুরী ?

কেন আমরা আমাদের জানমাল শূলে চড়িয়ে দেই এমন এমনদের তাক লাগাত যারা আমার জীবনে কোনো মানেই রাখেনা। আমার যখন দুঃখের সীমার থাকবেনা , তখন তারা একজনও কিন্তু সেই দুঃ মোচনে ফিরেও চাইবেন না।

কাজেই বিবেকবান , দায়িত্বশীল সন্তান মানবিক মানুষ হিসেবে সাধ্যের অতিরিক্ত ব্যয় কিংবা অযথা অপচয় করবেন না।

যদি আপনি আমাদের যুক্তিতে কিছুমাত্র সায় দেন , তাহলে পরের আলোচনা আপনার জন্য।

 

সোনা নয় তত খাঁটি

 

বিয়ের জন্য প্রধান খরচ যদি হয় ভেন্যু এবং ভোজন , তবে এর চেয়েও খুব কম কিছু তো নয়ই বরং তা ছাপিয়েও যায় বিয়ের গয়না। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের দাম বেড়ে আবার কমেও যায়, কিন্তু এর সাথে পাল্লা দিয়ে সোনার দাম কেবল বেড়েই যায়, কমে না। গত পঁচিশ বছরে সোনার দাম ১৩ গুন বেড়েছে। ভরি প্রতি আটাত্তর হাজার টাকা। একটা মোটামুটি চোখে ধরবা মতো নেক্লেস, বালা, দুল, ঝাপ্টা- টিকলী , নাকফুল ইত্যাদিতে লাখ দশেক পড়েই যাবে।

এবং এই ভিক্টোরিয়ান নেক্লেস, দুল , বালা নিজের বিয়ের পর নিজের বা সঙ্গী/ সঙ্গিনীর ভাইবোনের বিয়ে ছাড়া আর কোথাও পরে গেলে সবারি চোখ কপালে ওঠে। তাই এই গয়নার পরিনতি হবে ব্যাঙ্কের লকার কিংবা ঘরের সিন্দুকে, যেটা বেশ ঝুঁকিপূর্ন আমাদের দেশের পরিস্থিতিতে।

তাই মায়ের গয়না পলিশ করে দিলে বা ভেংগে নতুন গড়িয়ে দিলে তাতে খুব বেশী খরচ যোগ হয়না।

তবে সেটা না থাকলে নতুন গয়নার ক্ষেত্রে এমন এক দুইবারের পরিধেয় গয়নার জন্য চাঁদনী চকের রূপার দোকানে ডিজাইনমত গয়না রূপায় গড়ে সোনার পানিতে মুড়ে দিলে সেই কাজ অতি সুলভে সম্পন্ন করা যাবে।

কিছু লোক হয়তো জেনে যাবেই যে মূল গয়নাটা সোনার না। তাতে কি এসে যায়? তাঁদের বলবেন , যে তাঁদের মত করেই এমন গয়না আপনি করতেই পারতেন। কিন্তু আপনি এই অপচয়ে সায় দিতে পারছেন না। তাই করেন নি। ব্যস! যারা আপনাকে বোঝার তাঁদের কাছে ব্যখ্যা লাগবেনা আর যারা বিয়েতে আসেনই ফোড়ন কাটতে তাঁদের আপনি কোনোকিছুতেই আটকাতে পারবেন না।

তাই ঝেড়ে দিন। নিজে খুশী থাকুন।

এছাড়া রূপায় বানানো গহনাগুলোও যদি আর প্রয়োজন না হয় তো ফের সেই রূপার দোকান থেকেই আসল চেহারায় ফিরিয়ে আনতে পারেন কিংবা অন্য গয়নায় বিনিময় করে নিতে পারেন  

 

কেবা আপন কেবা পর

 

দাওয়াতের লিস্ট করার ক্ষেত্রে কিছু ফ্যাক্টর মাথায় রাখতে হবে। তবে সবার আগে মাথায় রাখুন, আপনি কোনো প্রিন্স বা টাটা বিড়লার সন্তান না।

বার বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেক সময়েই দাওয়া না দেয়া নিয়ে মনোমালিন্য দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কে ফাটলও ধরে থাকে।

তাই অনেক আগে থেকেই এক্সেল ফাইলে, নয়তো নেহায়েত ব্যাক্তিগত ডায়েরী বা নোটবুকেই অতিথি তালিকা প্রস্তুত করতে থাকবেন। প্রয়োজনে তাতে কাঁটা ছেড়াও হবে। নিজ পরিবার, আনা গোনা আছে এমন প্রতিবেশী , সহকর্মী , বাল্যবন্ধু ছাড়াও দাওয়া কাকে কাকে দিতেই হবে তার একটা মানদন্ড থাকবে বৈকি

যে আত্মীয় তাঁর দাওয়াতের তালিকায় আপনাদের ছেঁটে ফেলেছিল, যে বন্ধু আপনাকে স্মরনে রাখেনি তাঁদের দাওয়াত দিয়ে বিব্রত বা বিরক্ত করা ঠিক হবে কিনা সে আপনার সম্পর্কের সমীকরন। তবে এও হতে পারে বন্ধু বা আত্মীয় অতিথি সীমিত রাখতে বাধ্য ছিল ,তাই আপনি বাদ পড়ে গেছিলেন। এমন দুচারজন যোগ দিলে যদি সত্যিই কাছের কারো সাথে পাষাণ ভার নেমে যায়, সে অতি বাঞ্ছনীয়।

বড় উপদ্রপ হলো তদসত্বেও দাওয়াতে অনেকেই আসেন না এবং আগে জানাবার প্রয়োজনও বোধ করেন না। এবং এই সংখ্যা বেশী হলে এত বিলাসী খাবারগুলি নিয়ে সত্যিই কষ্টকর অপচয়ের দায় নিতে হয়।

কাজেই আমাদের এই পেইজের মাধ্যমে দাওয়াত দিলে সেখানে নিশ্চিতকরন এবং কতজন আসবেন সেটার অপশনও রাখবেন। যাতে অন্তত কিছুটা গুরুত্ব আরোপ করা যায়। অতিথি মানসিক পীড়ার তাড়নায় অগ্রীম জানাতে বাধ্য হয়।

 

সুন্দর বটে তব অঙ্গদখানি তারায় তারায় খচিত

বিয়ের সব অনুষ্ঠানের পোশাক অভিনব হবে এমন সবারই স্বপ্ন থাকে। সবাই যেন মুগ্ধ হয়ে তাঁর অংগসজ্জা দেখে, তাঁকে যেন সবর্গের অপ্সরা কিংবা পছন্দের স্টারের মতো লাগে! কিন্তু সেই জন্যে ভারত কিংবা দেশীয় বড় ব্রান্ডে কাড়ি কাড়ি অর্থ কি ঢালতে হবে?

বরং বর কনের পোশাকটা আরো কয়বার পরা চলে এমন হলে ভালো হয় না? শাড়ি ছাড়াও এখন ল্যাহেংগা, ঘাগড়া চোলি, গাউন অনেকে বেছে নেন। বরের পোশাকেও আছে বৈচিত্র।

প্রসংগে আমাদের পরামর্শ থাকবে দেশী পন্য কিনে হন ধন্য। মীরপুর বেনারসী পল্লিতে চলে যান। খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে বিয়ের শাড়ী পাবেন। কাতান কাপড় পাবেন যা দিয়ে তাঁতিকে দিয়েই আপনার নির্বাচিত, অনেকদিন ধরে খুঁজে নেট থেকে নামিয়ে রাখা কোনো ডিজাইন দেখিয়ে নিজের বেছে দেয়া কাতান, লেইস, কাপড় ইত্যাদিতে যে জামাটা তৈরী হবে তা অবশ্যই ইউনিক এবং এক পিসমাত্র হবেই

বর কনে উভয়েই এক্ষেত্রে বিহারী ক্যাম্পেও অনেক তাঁতি বা কারীগর, রি পুঁথি নকশার শিল্পী পাবেন যারা খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে আপনার পোশাকের ওপর নির্দিষ্ট কাজ করে দেবে।

 

ছিন্ন পাতায় সাজাই তরণী

 

এখনের বিয়েতে যেমন অনেকগুলি অনুষ্ঠান তেমন একেক অনুষ্ঠানের জন্য একেক অঙ্গসজ্জা এতেও থাকে প্রতিযোগিতা আর সামাজিক চাপ।

হাতে একটু সময় নিয়ে যদি প্ল্যান করা যায় তো খুব বাগাড়ম্বর কিছুর চেয়ে প্রাকৃতিক ফুল পাতা ইত্যাদিতেও অনন্য চেহারা দেয়া যায়।

এক্ষেত্রে বন্ধু পরিচিতর ভেতরে প্রফেশনাল বা সত্যিই মেধাবী কেউ না থাকলে ছোট পরিসরের বা সদ্যজাত ডেকোরেটরদের বেছে নেয়াটা যেমন সাশ্রয়ী , তেমনি এদের দিয়ে নিজস্ব আইডিয়া বাস্তবায়ন করাতে পারলে সেটা হবে ইউনিক। এক্ষেত্রে Pinterest  আপনাকে অনেক ধারনা নমুনা দিতে পারবে।

 

যদি বউ সাজো গো

 

ইউটিউব আমাদের অনেকের অনেক কাজে গুরু হয়ে উঠেছে। অনেকেই ইউটিউব দেখে চমৎকার সাজতে পারেন। অন্যদিকে অনেকের , বিশেষত পার্লারে সেজে অনভ্যস্ত যারা, তাঁদের নিজের বিয়ের সাজ পছন্দ হয়নি বলে চিরস্থায়ী আফসোসের এক উপাত্ত থেকে যায়। বুকের ভেতরে এক স্থায়ী পোড়ামাটির মত। বিয়ের এল্বামটাই আর খুলতে ইচ্ছে হয়না!  

এমন অবস্থা নিরসনে সাজ-পটুদের বা সাজ পটু কোনো বোন বান্ধবী, যার কাছে সেজে অনেক তৃপ্ত হয়েছেন, এম কাউকে বেছে নিতেই পারেন। তিনিই বরং আপনাকে অনেক বেশী আপনার মত করে সাজাবে।

নিজে নিজে সাজতে চাইলে আগে একবার ট্রায়াল সেশন করতে পারেন, আর সাথে ইউটিউব এসিস্ট্যান্ট তো আছেই।

দিনশেষে যখন বিয়ের এল্বামের পাতা ওল্টাবেন তখন তা অনেক বেশী অর্থপূর্ন স্মৃতিময় হয়ে উঠবে।

এছাড়াও যদি আনুসাঙ্গিক কোনো টিপস চান, তো আমাদের জানাবেন। পাশেই পাবেন।।

 

 Copyright  2021 DeshiWedding.com All rights reserved.