বিয়ের যত আশ্চর্য রীতি- ১। 

বিয়ের কনেদের মোটাতাজাকরন ফার্ম

-  স্থান= মৌরিতানিয়া , পশ্চিম আফ্রিকা। 

সারাবিশ্বে যখন একহারা ছিপছিপে গড়নের জন্য তরুনীরা মরিয়া , যে কোনো ধরনের ডায়েট, ওয়ার্ক আউট, এমনকি পিল বা সার্জারীর শরনাপন্ন হচ্ছে বেশুমার, বিয়ের আগে চলছে ওয়েডিং প্যাকেজ- পাত্র পাত্রীকে ছিপছিপে জিরো ফিগার করে তোলার গ্যারান্টি -  ঠিক সেই সমান্তলার সময়েই আছে এমন একটি দেশ যেখানে মেয়েদের বিয়ের উপযোগী হতে যথেষ্ট পরিমানে স্থুল হতে এখনো প্রচলিত আছে মোটা তাজাকরন ফার্ম! 

কারন তাঁদের বিশ্বাস , একটি মেয়ের দৈহিক আকৃতিই নির্দেশ করে সে তাঁর স্বামীর হৃদয়ের কতখানি জায়গা দখল করে থাকবে। 

(" মিন্ট এলি, অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন হেডস অফ হাউসহোল্ডস-এর প্রধান)

বৃটিশ মেইনস্ট্রিম দৈনিক “দ্য গার্ডিয়েন”এর বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রচলিত ধারায় এসব খামারে ছোট ছোট মেয়েদের সারাদিন ব্যাপি যথেষ্ট পরিমানে খাবার ও তরল গলধিকরন করানো হয়। এমনকি না খেতে পেয়ে বমি উগড়ে দিলে শাস্তিস্বরূপ তাদের সেই বমিই গিলতে বাধ্য করা হয়। 

গ্রামীণ মৌরিতানিয়ায় হাজার হাজার তরুণী এখন তাঁদের ভবিষ্যত নিয়ে আতংকিত,  যেখানে প্রচারকারীরা বলছেন যে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি সামরিক জান্তারা দখল করার পর থেকে বিয়ের জন্য অল্পবয়সী মেয়েদের জোর করে খাওয়ানোর নিষ্ঠুর অভ্যাসটি আশঙ্কাজনকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। 

“লেব্লুহ” নামক এই প্রথাটি বাল্যবিবাহের সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত । প্রায়শই পাঁচ, সাত বা নয় বছরের মেয়েদের রীতিমত মহিলাসুলভ স্থুলাকৃতি এবং দৈহিক গঠন অর্জনের জন্য অতিরিক্ত খেতে বাধ্য করা হয়, যাতে তাকে যতটা সম্ভব অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেয়া যায়। গ্রামীণ পরিবারের এসব মেয়েদের লেবলুহ রীতির জন্য বিশেষ "মোটাতাজাকরন খামারে" নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে বয়স্ক মহিলারা, বা মেয়েটির খালা / নানী তাদের সাথে তাদের সামগ্রীক মোটাকরন পদ্ধতি নিশ্চিত করতে একত্রে অবস্থান করে। 

একজন ছয় বছর বয়সী মেয়ের জন্য এখানে একটি সাধারণ দৈনিক খাদ্যের মধ্যে থাকবে দুই কেজি ভুট্টার স্টার্চ - দুই কাপ মাখন মিশ্রিত, পাশাপাশি ২০ লিটার উটের দুধ। 

স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানা, স্কুলের ছুটির সময় বা বর্ষাকালে যখন প্রচুর দুধ থাকে, তখন মোটাতাজাকরণ করা হয় । মেয়েটিকে কিছু না বুঝিয়েই বাড়ি থেকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। 

সে কষ্ট পায়, বিক্ষুব্ধ হয়। কিন্তু তাকে এই বলে নিরস্ত করা হয় যে মোটা হওয়া তার ভবিষ্যত জীবনে সুখ নিয়ে আসবে। এসব ফার্মের ম্যাট্রনরা এক্ষেত্রে লাঠিও ব্যবহার করে যা তারা মেয়েটির উরুতে গড়িয়ে দেয়, টিস্যু ভেঙ্গে এবং প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করতে।

একটি সফল মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ১২ বছর বয়সী একজনের ওজন ৮০ কেজিতে পৌছনো । 

এর ফলে ১৫ বছর বয়সের মধ্যেই তাকে রীতিমতো ৩০ বছর বয়সী একজন মহিলারর মত দেখায়। 

ইতিহাসবিদরা বলেছেন যে এই প্রথাটি শুরু হয়েছিল প্রাক-ঔপনিবেশিক সময় থেকে যখন মৌরিতানিয়ার সমস্ত অংশে সাদা মুর আরব যাযাবর ছিল। 

এই প্রথামতে একজন ব্যাক্তি যত ধনী হবে, তার স্ত্রী তত কম কাজ করবে। স্ত্রীকে তারা চায় সে যেন সারাদিন তার তাঁবুতে বসে থাকে এবং তাঁর কালো দাসদের গৃহস্থালী কাজকর্ম তদারকি করে কেবল । 

এমনকি প্রাচীনকালে এদের স্ট্রেচমার্চ রত্ন বা গর্বের বিষয় হিসাবে প্রশংসা পেতো। । আজও তাদের নারীদের কোমরের চারপাশের চর্বি শৈল্পিক গৌরবের চিহ্ন হিসেবে সমাদৃত হয় এবং মেয়েদের মোটাতাজাকরণের জন্য পাঠানো বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। এসব মেয়েদের বিয়ের পর পস্মাসনে বসতে, নরমভাবে কথা বলতে, খাবারে বিশেষ পাত্র ব্যবহার করতে এবং নবী মুহাম্মদ (সা ঃ ) এর স্ত্রীদের অনুকরণীয় জীবনকে অনুকরণ করতে শেখানো হয়। 

মেয়েদের মোটাতাজাকরণের এই অনুশীলন মৌরিতানিয়ার বাইরে, উত্তর মালি এবং গ্রামীণ নাইজারে এবং এগার শতকে আলমোরাভিড রাজবংশ দ্বারা অধিকৃত বর্তমান স্পেন এবং পর্তুগালের অর্ধেক অঞ্চলে বিদ্যমান। নাইজেরিয়ার ক্যালাবার রাজ্য এবং উত্তর ক্যামেরুনেও মোটাতাজাকরণের অনুশীলন অব্যাহত রয়েছে।

-----------

এদিকে রাজনৈতিক বিজ্ঞানী মোহাম্মদ এল-মুনির দাবি করেছেন যে পশ্চিমা প্রভাব মেয়েলি চর্বির আকর্ষণকে মুছে দিয়েছে। তিনি বলেন  

- মোটাতাজাকরণ ১৯৫০ এর দশকের একটি বিষয়। আজকাল মেয়েরা টেলিভিশনে ফ্যাশন শো দেখে। তাদের রোল মডেল হলেন আমেরিকান অভিনেত্রী বা আবেদনময় পোশাকে লেবানীজ গায়িকারা । মেয়েরা খেলাধুলা করে। হ্যাঁ, মৌরিতানীয় পুরুষরা সামান্য গোলাকার মেয়েদের পছন্দ করে। তবে আমরা এই মোটাতাজাকরন পদ্ধতি চাই না। 

অন্যদিকে, মিন্ট এলি, অ্যাসোসিয়েশন অফ উইমেন হেডস অফ হাউসহোল্ডস-এর প্রধান বলেন, “গ্রামীণ মৌরিতানিয়ায় এই অনুশীলনের পুনরুত্থান একটি হতাশাজনক বিপর্যয় । কারন , অনেকাংশের মেয়েরাই গ্রামাঞ্চলে বাস করে এবং তাদের তথ্য পাবার কোনো সুযোগ নেই। “

কিছু প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা তাদের এই প্রানঘাতি ওজন-বাড়ানোর অভিজ্ঞতাও তুলে ধরে বলেছেন,

-  মোটা থাকার জন্য, প্রাপ্তবয়স্কদের মতো মোটা দেখানোর জন্য মেয়েরা পশুর হরমোন গ্রহণ করে।  ক্ষুধা বাড়ায় এমন প্রেসক্রিপশনের ওষুধ কেনে যেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রবল। এই সমস্যাটি এখনও আমাদের মধ্যে অনেক বেশি।

-------------------------------------

সুত্রঃ অ্যালেক্স ডুভাল স্মিথ, আফ্রিকা সংবাদদাতা, দ্য গার্ডিয়ান।